রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কার পেল সায়মন বিচ রিসোর্ট ও সায়মন হেরিটেজ টেকনাফে ৫ কোটি টাকার মূল্যের ১ কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার ১ পেকুয়ায় শহীদ ওয়াসিমের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সাথে সাক্ষাত করলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ ইনানী সৈকতে গোসলে নেমে পর্যটকের মৃত্যু নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিরাপদ পর্যটনের জন্য ‘সমুদ্র সন্ধ্যা’ রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে জি থ্রি রাইফেল সহ আরসা কমান্ডার আটক টেকনাফের পাহাড়ে জেল ফেরত যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার টেকনাফে ৭ লাখ টাকা মালামাল নিলামে সর্বোচ্চ ডাককারি স্থল বন্দরের বিশিষ্ট আমদানি ও রপ্তানি কারক সিআইপি ওমর ফারুক টেকনাফের নিকটবর্তী মিয়ানমারের ‘লালদিয়া’ নিয়ন্ত্রণে তীব্র সংঘাত : গুলি আসছে স্থলবন্দর ও আশে-পাশের এলাকায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

টেকনাফের বনপ্রাণ অভয়ারণ্য কুদুম গুহার রহস্যময় গল্প

মিজানুল কাশেম নাহিদ : টেকনাফ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য, পূর্বনাম : টেকনাফ গেম রিজার্ভ বাংলাদেশের একমাত্র গেম রিজার্ভ বন।[১] এর আয়তন ১১,৬১৫ হেক্টর।[২] বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়েকটি স্থানে বন্য হাতির দেখা মেলে তার মধ্যে টেকনাফ গেম রিজার্ভ অন্যতম। বন্য এশীয় হাতির অভয়ারণ্য হিসাবে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। টেকনাফ গেম রিজার্ভের অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফে।[৩] যথেষ্ট বিস্তীর্ণ এই গেম রিজার্ভে বন ছাড়াও আছে নাইটং পাহাড়, কুদুম গুহা, কুঠি পাহাড় প্রভৃতি আকর্ষণীয় স্থান। বনের উঁচু পাহাড় আর বঙ্গোপসাগরের মাঝে রয়েছে বিশাল গর্জন বন। আছে ১০০০ ফুট উঁচু তৈঙ্গা চূড়া। প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে আছে ফুল, ফল, বাহারি গাছ। সড়ক পথে সহজ যোগাযোগের কারণে পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষনীয় ভ্রমণ স্থান।

বাংলাদেশের মানচিত্রে টেকনাফ গেম রিজার্ভের অবস্থান

অবস্থান : টেকনাফ উপজেলা, কক্সবাজার জেলা, বাংলাদেশ
নিকটবর্তী শহর টেকনাফ
স্থানাঙ্ক:-২১°০৪′০০″ উত্তর ৯২°০৯′০০″ পূর্ব / ২১.০৬৬৬৭° উত্তর ৯২.১৫০০০°
পূর্ব
আয়তন:-১১,৬১৫ হেক্টর
স্থাপিত:-১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ
কর্তৃপক্ষ
বাংলাদেশ বন বিভাগ

অবস্থান ও আয়তন সম্পাদনা

টেকনাফ গেম রিজার্ভ বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় টেকনাফ উপদ্বীপে অবস্থিত। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন জুড়ে এর বিস্তৃতী; এ ইউনিয়ন গুলো হল – বাহারছড়া, হ্নীলা, সুবরাং, টেকনাফ এবং হোয়াইক্যং।[৪] কক্সবাজার শহর থেকে এর দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার।[৩] এই গেম রিজার্ভের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নাফ নদী; এর ঠিক পরপরই মায়ানমার সীমান্ত এবং পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগর।

টেকনাফ গেম রিজার্ভ একটি সরল পাহাড় শ্রেনীর অংশ, যার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৭০০ মিটার। এই গেম রিজার্ভের দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে ২৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমে ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার।

ইতিহাস সম্পাদনা

সংরক্ষিত বনের ১১,৬১৫ হেক্টর জায়গা নিয়ে ১৯৮৩ সালে টেকনাফ গেম রিজার্ভ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের তিনটি ফরেষ্ট রেঞ্জঃ হোয়াইক্যং, শীলখালী এবং টেকনাফ এর ১০ টি ব্লক এ গেম রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত। বন্য এশীয় হাতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ভূপ্রকৃতি সম্পাদনা

টেকনাফ গেম রিজার্ভের প্রায় পুরোটাই একটি সরল পাহাড় শ্রেণীর অংশ। টেকনাফ উপদ্বীপের প্রায় মাঝ বরাবর পাহাড় গুলোর চূড়া উঠে গেছে। আছে বেশ কিছু সংকীর্ণ উপত্যকা ও গিরিখাত। এসব উপত্যকা আর গিরিখাত দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া বা ঝর্ণা, যা শেষে মিশেছে পূর্বদিকে নাফ নদীতে এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে। এসব ছড়ার বেশির ভাগই মৌসুমী, বর্ষাকালে পানি থাকে এবং শীতে শুকিয়ে যায়।

গেম রিজার্ভের বড় অংশ পাহাড়ি মৃত্তিকা গঠিত। পূর্ব পাশে নাফ নদীর তীর ঘেষে আছে জোয়ার ভাটায় সৃষ্ট কাদা মাটির ম্যানগ্রোভ বন। পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের তীরে আছে বালুকাবেলা গঠিত সৈকত।

উদ্ভিদ ও জীব বৈচিত্র্য সম্পাদনা

টেকনাফ গেম রিজার্ভ জীব বৈচিত্রে ভরপুর এবং এই বনের জীববৈচিত্রকে বাংলাদেশের মধ্যে সবার্ধিক বলে ধারনা করা হয়। এই বনে ২৯০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৩ প্রজাতির উভচর প্রানী রয়েছে।

বিভিন্ন ধরনের গাছের মধ্যে আছে চাপালিশ (Artocarpus chaplasha), তেলি গর্জন (Dipterocarpus turbinatus), জলপাই (Elaeocarpus floribundaas), হরগজা (Dillenia pentagyna), আম চুন্দল (Swintonia floribunda), বুনো অশোক (Saraca asoca), জারুল প্রভৃতি। পাখির মধ্যে আছে ছোট কানাকুবো, নীলকান বসন্তবাউরি, বড়হলদেঝুঁটি কাঠকুড়ালী, এশীয় দাগি কুঁটি পেঁচা, কালাগলা টুনটুনি, লালমৌটুসী ইত্যাদি।

টেকনাফ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে সাময়িকভাবে বিচরণকারী এশীয় হাতির দেখা পাওয়া যায়।[৫] যেটি বাংলাদেশের বুনো হাতির একটি বড় অংশ। এখানে বাস করা বাংলাদেশে বুনো মোট হাতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া বিলুপ্তপ্রায় বুনোকুকুর, উল্লুক, সম্বর হরিণ, উড়ক্কু কাঠবিড়ালী, সজারু প্রভৃতি প্রাণীরও দেখা মেলে। এলাকায় নৈসর্গিক অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করছে নিসর্গ সাপোর্ট প্রোগ্রাম।[৬]

কুদুম গুহা সম্পাদনা

টেকনাফ গেম রিজার্ভের কয়েকটি প্রধান আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কুদুম গুহা। জানামতে এটি বাংলাদেশের একমাত্র বালু-মাটির গুহা। কুদুম গুহায় প্রচুর বাদুড় বাস করে, তাই এটি বাদুর গুহা নামেও পরিচিত। কুদুম গুহায় দুই প্রজাতির বাদুড় থাকে। শুধু তাই নয়, বাদুর ছাড়াও এই গুহায় বাস করে ৪ প্রজাতির শামুক, গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝিরিতে থাকে ৪ প্রজাতির মাছ আর আছে তিন প্রজাতির
মাকড়শা। গুহার বাইরে থেকে পাখিদের এসে গুহার শামুক খেতে দেখা গেছে।[৭]প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে আকষর্ণীয় ইকোট্যুরিজমের স্থান হিসাবে কুদুম গুহার গুরূত্ব ব্যাপক।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888